মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন
সাজন বড়ুয়া সাজু:
কক্সবাজারে প্রেম করতে না পেরে ৫ বছরের শিশুকে হত্যা করেছে আপন চাচাত ভাই। এঘটনায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকারি সন্দেহে মো: তারেক আজিজ নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। আজ দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ের কোম্পানি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন শামিম।
আনোয়ার হোসেন শামিম জানান, কক্সবাজার উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের জুমছড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পাঁচ বছর বয়সী শিশু অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় ক্লু-লেস মামলা দায়েরের ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলার রহস্য উন্মোচন এবং প্রধান ও একমাত্র আসামী মোঃ তারেক আজিজ’কে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৫।এসময় অপহরণ কাজে ব্যবহৃত অটোরিক্সা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার
গত ১ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজার জেলার পিএমখালী ইউনিয়নের জুমছড়ি এলাকার মোঃ ইসহাকের ৪র্থ সন্তান মোঃ আবিদ (৫) কে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর থেকে তার পরিবার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে রাত ১১টার সময় ভিকটিমের মায়ের মোবাইলে অপরিচিত একটি ফোন থেকে কল করে জানায় যে, তোমার ছেলেকে অপহরণ করেছি, ছেলেকে পেতে হলে তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। না দিলে তোমার ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলব। এরপর ভিকটিমকে কোথাও না পেয়ে ভিকটিমের পরিবার বাড়িতে অবস্থান করে। পরেরদিন অর্থাৎ গত ২ ফেব্রুয়ারী সকাল ১১টার দিকে এলাকার লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারে যে, কক্সবাজার জেলার সদর থানাধীন পিএমখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডস্থ পুরাতন ব্রিক ফিল্ডের পূর্ব পার্শ্বে পুকুরে একটি শিশুর লাশ ভাসছে। উক্ত সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের পরিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুকুরের পশ্চিম পার্শ্বে ঘাটের সামনে ভাসমান অবস্থা থেকে ভিকটিম (আবিদ) এর মৃতদেহ উদ্ধার করে। একটি অবুঝ শিশুকে অপহরণ করে মেরে ফেলায় এলাকার লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এতে ভিকটিমের পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং শোকের ছায়া নেমে আসে।
খবর পেয়ে র্যাব-১৫ এর আভিযানিক দল ভিকটিমের অপহরণ চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে। বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি ক্লু-লেস হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে অপহরণকারীদের সনাক্তকরণসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার অভিযানে নামেন র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাবের একাধিক আভিযানিক দল ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মামলার প্রধান আসামী ওই এলাকার মোহাম্মদ আজিজের ছেলে মোঃ তারেক আজিজ (২৬), গ্রেফতার করা হয়।এসময় উদ্ধার করা হয় অপহরণ কাজে ব্যবহৃত ১টি ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও ১টি বাটন মোবাইল ফোন।
এ ব্যাপারে গ্রেফতারকৃত আসামী র্যাবকে জানিয়েছেন, সে পেশায় সে একজন অটোরিক্সা চালক এবং সম্পর্কে ভিকটিম তার আপন চাচাতো ভাই। ভিকটিমের বোনকে দীর্ঘদিন প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হয়ে সে তার ভাই আবিদকে (ভিকটিম) মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। সে প্রায় সময় আবিদের জন্য চকলেট, আচার ও অন্যান্য খাবার নিয়ে আসতো। যাতে তার সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ১ ফেব্রুয়ারী বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আবিদ (ভিকটিম) বাড়ির পাশের রাস্তায় খেলাধুলা করছিল। একপর্যায়ে তারেক আজিজ ভিকটিম আবিদ’কে চকলেটের লোভ দেখিয়ে তার অটোরিক্সায় বসিয়ে পিএমখালী ইউনিয়নের জুমছড়ি হিন্দুপাড়াস্থ বাঁকখালী নদীর পাড়ে নিয়ে যায় এবং সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে নিয়ে খেলাধুলা করে যাতে কেউ বুঝতে না পারে। সন্ধ্যার পরে নদীর পাড়ের পার্শ্বে একটি পুকুরপাড়ে তাকে বেঁধে রেখে বাড়িতে চলে আসে। সন্দেহ এড়াতে সেও বাড়ির লোকজনের সাথে আবিদ’কে খোঁজাখুজি করে। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে কোথাও না পেয়ে সবাই বাড়িতে চলে গেলে সে (তারেক আজিজ) আবার সেই পুকুরপাড়ে যায়। পুকুরপাড় থেকে আবিদের (ভিকটিম) মায়ের মোবাইলে কল দিয়ে জানায় যে, “তোর ছেলেকে অপহরণ করেছি, বাঁচাতে হলে তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। না দিলে তোর ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলব।” এই বলে ফোনটা কেটে দেয়। পরে সে আবিদকে পুকুরে নিয়ে গিয়ে পানিতে চেপে ধরে মেরে ফেলে এবং তাকে পুকুরে ফেলে দিয়ে চলে আসে বলে জানায়।
ভয়েস/আআ